চিঠি লেখার নিয়ম: ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল বা দাপ্তরিক PDF

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman
Content Writer

Mostafizur Rahman is the author and content strategist at Harkora, specializing in South Asian history, culture, and architecture. With a strong background in English/Bangla Language & Literature, General Knowledge, and job circulars, he provides well-researched and insightful content. Passionate about practical life in Bangladesh, he also covers essential citizen services, including e-Passport, visa processes, overseas employment, and studying abroad.

চিঠি লেখার নিয়ম জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে শুরু করে অফিসিয়াল বা দাপ্তরিক কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 

সঠিকভাবে চিঠি লেখার মাধ্যমে নিজের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যায় এবং প্রাপকের কাছে একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। 

ব্যক্তিগত চিঠি সাধারণত আবেগপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে লেখা হয়, যেখানে অফিসিয়াল বা দাপ্তরিক চিঠি হয় আনুষ্ঠানিক ও নিয়মবদ্ধ। 

এই লেখায় আমরা চিঠি লেখার নিয়ম, কাঠামো, ও প্রয়োজনীয় উদাহরণসহ একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা (PDF) তুলে ধরব।

চিঠি বা পত্রের প্রকারভেদ (Types of Letters)

বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী প্রধানত দুই ধরনের চিঠি লেখা হয়।

নিচে চিঠি লেখার ধরন দুটি উল্লেখ করা হলো:

১. ব্যক্তিগত চিঠি বা অনানুষ্ঠানিক পত্র (Informal Letter)

বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যদের কাছে লেখা হয়। এই পত্রে ভাষা হয় অন্তরঙ্গ ও সহজ-সরল।

২. ব্যবহারিক/দাপ্তরিক চিঠি বা আনুষ্ঠানিক পত্র (Formal Letter)

এটি মূলত সরকারি-বেসরকারি অফিস, সংবাদপত্র, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ বা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা হয়। 

এখানে ভাষা হয় সংযত, মার্জিত ও নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে আবেদনপত্র, দরখাস্ত, সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য চিঠি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

ব্যক্তিগত চিঠি লেখার নিয়ম (Informal Letter Format)

ব্যক্তিগত চিঠি লেখার নিয়ম

ব্যক্তিগত চিঠিকে ‘পত্র রচনা’ বলা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো হৃদয়ের কথা প্রকাশ করা।

অংশঅবস্থানলেখার নিয়মউদাহরণ
১. স্থান ও তারিখপাতার ডানদিকে উপরেযে স্থান থেকে চিঠি লেখা হচ্ছে তার নাম ও তারিখ।ঢাকা, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫
২. সম্বোধনপাতার বামদিকে উপরেপ্রাপকের সাথে সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সম্বোধন।প্রিয় বন্ধু রানা/ শ্রদ্ধেয় বাবা/ স্নেহের ছোট বোন
৩. মূল বক্তব্যসম্বোধনের পর নতুন অনুচ্ছেদএটি চিঠির প্রধান অংশ, যেখানে মনের কথা বা প্রয়োজনীয় তথ্য লেখা হয়। এটি কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করা যেতে পারে।প্রথমে কুশল জিজ্ঞাসা, তারপর মূল কথা, শেষে উপদেশ/শুভেচ্ছা।
৪. বিদায় সম্ভাষণমূল বক্তব্যের শেষেপত্র শেষ করার আগে লেখকের নিজস্ব পরিচিতিমূলক কথা।তোমারই বন্ধু/ তোমার স্নেহের/ শুভাকাঙ্ক্ষী
৫. লেখকের নামবিদায় সম্ভাষণের ঠিক নিচেলেখকের স্বাক্ষর বা নাম।[আপনার নাম]
৬. ঠিকানা (খাম)চিঠির শেষে একটি খামের চিত্র এঁকেখামের বামদিকে ‘প্রেরক’ (Sender) ও ডানদিকে ‘প্রাপক’ (Receiver) এর ঠিকানা স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।প্রেরক: [আপনার নাম, ঠিকানা]; প্রাপক: [বন্ধুর নাম, ঠিকানা, ডাকঘর, জেলা]।

অফিসিয়াল/দাপ্তরিক চিঠি বা আবেদনপত্র লেখার নিয়ম (Formal Letter/Application Format)

অফিসিয়াল/দাপ্তরিক চিঠি বা আবেদনপত্র লেখার নিয়ম

আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার সময় কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই পত্রে কোনো প্রকার অপ্রয়োজনীয় কথা লেখা উচিত নয়।

বাংলায় অফিসিয়াল চিঠি লেখার নিয়ম:

অংশঅবস্থানলেখার নিয়মউদাহরণ
১. তারিখপাতার বামদিকে উপরেযে তারিখে চিঠি লেখা হচ্ছে।২৪ অক্টোবর, ২০২৫
২. প্রাপকের নাম ও পদবিতারিখের ঠিক নিচেযার কাছে চিঠি লেখা হচ্ছে তার পদবি ও ঠিকানা।বরাবর, প্রধান শিক্ষক, উত্তরা হাই স্কুল, ঢাকা।
৩. বিষয় (Subject)প্রাপকের ঠিকানার নিচেসংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ভাষায় চিঠির মূল উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হবে। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।বিষয়: তিন দিনের ছুটি মঞ্জুরের জন্য আবেদন।
৪. সম্বোধনবিষয়ের নিচে, বামদিকেসম্মানসূচক সম্বোধন।মহাশয়/মহাশয়া,
৫. মূল বক্তব্যসম্বোধনের পর নতুন অনুচ্ছেদএটি তিনটি অংশে বিভক্ত: ক) শুরুর অংশ (উদ্দেশ্য), খ) মধ্যের অংশ (বিস্তারিত বর্ণনা), গ) শেষের অংশ (আবেদন ও প্রার্থনা)।সবিনয় নিবেদন এই যে…/ বিস্তারিত বলার পর…/ অতএব, মহাশয় সমীপে আমার বিনীত প্রার্থনা…।
৬. নিবেদক/বিনীতমূল বক্তব্যের শেষে, ডানদিকেলেখকের পরিচয়জ্ঞাপক শব্দ।বিনীত নিবেদক/ আপনার একান্ত বাধ্য ছাত্র/ নিবেদক
৭. লেখকের নাম, পদবি/ঠিকানানিবেদকের নিচেলেখকের স্বাক্ষর, নাম, পদবি (যদি থাকে)।[আপনার নাম/স্বাক্ষর] শ্রেণি: দশম, রোল: ০৫।

চিঠি লেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

চিঠি লেখার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক নিয়ম ও কৌশল মেনে চললে লেখাটি হবে স্পষ্ট, সুন্দর এবং প্রভাববিস্তারী।

নিচে চিঠি লেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:

চিঠির উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন:

লেখার আগে ভাবুন আপনি কেন চিঠি লিখছেন – ব্যক্তিগত, আবেদনমূলক, বা দাপ্তরিক? এতে ভাষার ধরন ও ভঙ্গি ঠিক করা সহজ হয়।

উপযুক্ত সম্বোধন ব্যবহার করুন:

প্রাপকের পরিচয় অনুযায়ী “প্রিয়”, “জনাব”, “মাননীয়” ইত্যাদি সম্বোধন ব্যবহার করুন। এতে ভদ্রতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।

সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করুন:

অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে মূল বিষয়ে সরাসরি আসুন। চিঠি যেন পড়ে সহজে বোঝা যায়।

ভদ্র ও ইতিবাচক ভাষা বজায় রাখুন:

অভিযোগ বা অনুরোধমূলক চিঠিতেও ভাষা যেন শালীন ও সৌজন্যমূলক হয়।

পরিষ্কার বিন্যাস বজায় রাখুন:

চিঠির শুরু, মূল অংশ ও উপসংহার- এই তিনটি অংশ সঠিকভাবে সাজান।

তারিখ ও প্রেরকের ঠিকানা লিখুন:

অফিসিয়াল বা আবেদনমূলক চিঠিতে এগুলো অপরিহার্য।

ভুলত্রুটি পরীক্ষা করুন:

বানান, বিরামচিহ্ন ও বাক্যগঠন ভালোভাবে দেখে নিন।

শেষে উপযুক্ত সমাপ্তি লিখুন:

যেমন- “ইতি,” “বিশ্বস্ত,” “ধন্যবাদান্তে” ইত্যাদি ব্যবহার করুন এবং নাম-স্বাক্ষর যুক্ত করুন।

পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে চলা:

একই তথ্য বা কথা বারবার লেখা থেকে বিরত থাকুন।

FAQs

চিঠি লেখার জন্য কি কোনো নির্দিষ্ট বিন্যাস আছে?

হ্যাঁ, সাধারণত চিঠির শুরু, মূল অংশ এবং সমাপ্তি- এই তিনটি অংশ রাখা হয়। অফিসিয়াল চিঠিতে প্রেরকের ঠিকানা, তারিখ ও প্রাপকের ঠিকানা উল্লেখ করা আবশ্যক।

ব্যক্তিগত চিঠি ও অফিসিয়াল চিঠিতে পার্থক্য কী?

ব্যক্তিগত চিঠি বন্ধুত্বপূর্ণ ও আবেগপূর্ণ হয়, আর অফিসিয়াল চিঠি আনুষ্ঠানিক, সংক্ষিপ্ত ও প্রমাণভিত্তিক হয়।

চিঠিতে কোন ধরণের ভাষা ব্যবহার করা উচিত?

চিঠির ধরন অনুযায়ী ভাষা নির্ধারণ করতে হবে। ভদ্র, পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্ত ভাষা সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠিতে কতটা সংক্ষিপ্ত থাকা উচিত?

মূল বিষয়ের বাইরে অতিরিক্ত তথ্য না দিয়ে সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক লেখা উচিত।

চিঠি লেখার সময় কি ভূল বানান ঠিক করা আবশ্যক?

হ্যাঁ, বানান, বাক্যগঠন এবং বিরামচিহ্ন ঠিক করা চিঠির মান বজায় রাখে।

চিঠিতে সম্বোধন কেমন হওয়া উচিত?

প্রাপকের পরিচয় অনুযায়ী “প্রিয়,” “জনাব,” “মাননীয়” ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

চিঠির সমাপ্তি অংশে কী লিখা উচিত?

“ইতি,” “বিশ্বস্ত,” “ধন্যবাদান্তে” ইত্যাদি ব্যবহার করে নাম ও স্বাক্ষর লিখতে হয়।

চিঠি হাতে লেখা না কি কম্পিউটারে টাইপ করা ভালো?

ব্যক্তিগত চিঠি হাতে লেখা ভালো, আর অফিসিয়াল চিঠি সাধারণত টাইপ করা হয়।

চিঠিতে তারিখ উল্লেখ করা কি জরুরি?

অফিসিয়াল বা আবেদনমূলক চিঠিতে অবশ্যই তারিখ উল্লেখ করতে হবে। ব্যক্তিগত চিঠিতে তা ঐচ্ছিক।

চিঠি লেখার আগে কি পরিকল্পনা করা উচিত?

হ্যাঁ, চিঠি লেখার আগে উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও বিষয়বস্তু সাজানো পাঠকের কাছে বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

উপসংহার

চিঠি লেখার সঠিক নিয়ম ও কৌশল জানা থাকলে যেকোনো ধরনের বার্তা সহজে ও সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায়। 

ব্যক্তিগত, আবেদনমূলক কিংবা দাপ্তরিক- সব ধরনের চিঠির ক্ষেত্রে শুদ্ধ ভাষা, ভদ্রতা ও স্পষ্টতা অত্যন্ত জরুরি। 

লেখার আগে উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করা এবং শেষে উপযুক্তভাবে সমাপ্তি টানলে চিঠি পাঠকের মনে ভালো প্রভাব ফেলে। 

তাই যোগাযোগের এই প্রথাগত মাধ্যমকে কার্যকর রাখতে হলে চিঠি লেখার নিয়ম ও টিপসগুলো অনুশীলন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

Mostafizur Rahman
Mostafizur RahmanContent Writer

Mostafizur Rahman is the author and content strategist at Harkora, specializing in South Asian history, culture, and architecture. With a strong background in English/Bangla Language & Literature, General Knowledge, and job circulars, he provides well-researched and insightful content. Passionate about practical life in Bangladesh, he also covers essential citizen services, including e-Passport, visa processes, overseas employment, and studying abroad.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top