নিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman
Content Writer

Mostafizur Rahman is the author and content strategist at Harkora, specializing in South Asian history, culture, and architecture. With a strong background in English/Bangla Language & Literature, General Knowledge, and job circulars, he provides well-researched and insightful content. Passionate about practical life in Bangladesh, he also covers essential citizen services, including e-Passport, visa processes, overseas employment, and studying abroad.

নিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম ইংরেজিতে Neem নামে পরিচিত। নিমের বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica। বাংলাদেশে দেশে নিম একটি অতিপরিচিত ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ। নিম স্মরণাতিত কাল থেকেই বিভিন্ন ঔষধি ও স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে বহুল ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম বহু বর্ষজীবী চিরসবুজ বৃক্ষ। নিম গাছের পাতা, ডাল, ছাল, রস , শুকনো নিম পাতার পাউডার, নিম ফুলের মধু প্রতিটি অংশই উপকারী। ভারতীয় উপমহাদেশে অন্তত ৫০০০ বছর ধরে ঔষধি কাজে নিম ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণের মতে নিমে প্রায় ১৩০ ধরনের ঔষধি গুণ বিদ্যমান। মানবদেহের অভ্যন্তরের বিভিন্ন রোগব্যাধি নিরাময়ের পাশাপাশি নিম ত্বকের সমস্যায়ও খুব কার‌্যকর ঔষুধ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র নিম পাতাকে জাদুকরী পাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।  আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও নিমকে একটি অসাধারণ ঔষধি গুণসমৃদ্ধ বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নিম গাছকে একটি উপকারী বৃক্ষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

নিমের উপকারিতা ও অপকারিতা
পূর্ণ বয়স্ক বিকশিত একটি নিম গাছ, ছবি- WikiPedia

নিমের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

নিমের উপকারিতা

১. ত্বকের যত্নে নিম (Neem for skin care): ত্বকের যত্নে নিম পাতার বহুবিধ উপকারি গুণ রয়েছে। নিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে। যা মুখমণ্ডলের ব্রণের সমস্যায় খুব কা্যকর। নিমের রস বা নিম পাতা ছালের পেস্ট ব্রণে লাগালে ব্রণ নির্মূল হয়।  নিমপাতা ত্বকের দাগ ও পিগমেন্ট দূর করার মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও শরীরের যেকোনো অংশের ত্বকের দাদসহ যেকোনো ফাংগাল ইনফেকশনের নিরাময়েও নিম বিশেষ উপকারী। নিম পাতা ফুটানো পানিতে গোসল করলে গায়ের দুর্গন্ধও দূর হয়।

২. চুলের যত্নে নিম (Neem for hair care): নিম চুলের যত্নে খুব উপকারী। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিমের জুরি নেই। চুল পড়া রোধ, চুলের গোড়া মজবুত করা, চুলের উকুন দমন, চুলের খুশকি দূর করা ইত্যাদিতে নিম খুব কার্যকরী। নিমের রস বা নিম পাতা ছালের পেস্ট চুলে লাগালে চুল পড়া রোধ হয়, উকুন দূর হয়, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

৩.  দাঁতের যত্নে নিম (Neem for dental care): দাঁতের যত্নে নিমের অবিকল্প আর কিছু নেই। নিমের রস, নিম পাতা, নিমের ডাল, নিমের ছাল ইত্যাদি নিম গাছের সব অংশই দাঁতের এবং মুখের অভ্যন্তরের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়। দাঁত ব্যথা, মাড়ি ব্যাথা দূর করে, মুখের দুর্গন্ধ কমায়, দাঁত পরিষ্কার করে, দাঁতের ক্যাভিটি কমিয়ে ক্ষয় রোধ করে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিম (Neem helps in boosting immunity): নিমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিম শরীরে রোগ-জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। নিম ঠাণ্ডা জনিত সর্দি কাশি জ্বর প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিমের রস পান করলে রক্তের বিষাক্ত উপাদান দূর হয়। রক্তকে পরিশুদ্ধ করে।

৫. ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রণে নিম (Neem for controlling diabetes): ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রণে নিম কার্যকরী। নিমে থাকা কিছু উপাদান রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে রক্তে ইনসুলিন বৃদ্ধিতে কাজ করে।

৬. অ্যালার্জি নিরাময়ে নিম (Neem to cure allergies): নিম অ্যালার্জি নিরাময়ে প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে সমাদৃত। নিমপাতা গরম পানিতে দিয়ে কিছু দিন গোসল করলে অ্যালার্জি ও ত্বকের চুলকানি খোঁসপাচড়া সমাধানে বিশেষ উপকার করে। নিম পাতা বা নিমের ছাল এবং কাঁচা হলুদ একসাথে পেস্ট করে অ্যালার্জি বা আক্রান্ত স্থানে লাগালে তা খুব ভালো কাজ করে।

৭. চোখের চুলকানি নিরাময়ে নিম (Neem to cure itchy eyes): নিম পাতা চোখের চুলকানি, চোখের অস্বস্তি দূরীকরণে কার্যকর। নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে ফটানো পানি ঠাণ্ডা করে তুলা দিয়ে চোখে আলতো ভাবে লাগালে চোখের চুলকানি, জ্বালা, লালচেভাব, অস্বস্তিভাব নিমিষেই দূর হয়।

৮. ম্যালেরিয়া নিরাময়ে নিম (Neem to cure malaria): নিম ম্যালেলিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রতিকারে কার‌্যকর। ম্যালেরিয়ার উপসর্গ কমাতে নিম পাতার রস বা নিম পাতার চা খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত নিম পাতার রস সেবনে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়- যার ফলে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়।

৯. নিমের অন্যান্য উপকারিতা (Other benefits of neem): নিম পাতার রস বা পাতার পাউডার নিয়মিত খেলে মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ (Preventing urinary tract infections), কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধ, হাড় মজবুত করা, পেটের আলসার প্রতিরোধ করা, হজম শক্তি বৃদ্ধি করা, শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমানো, নিমের তেল বাত প্রতিরোধ করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে করে, পোকা মাকড়ের কামড়ের ব্যাথা হ্রাস করে, জণ্ডিস প্রতিরোধ করে।

নিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

নিমের অপকারিতা

নিমপাতা, নিমের রস, নিমের ছাল, ডাল ইত্যাদি অংশ বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার, মাত্রানুযায়ী ব্যবহার না করা বা নির্দেশনানুযায়ী ব্যবহার না করলে তার জন্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

১. নিম অতিরিক্ত ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of excessive use of neem): নিমের রস বা পাতা  অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, পাকস্থলীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিম সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।

২. গর্ভবতী নারীদের ক্ষতি (Harm to pregnant women): নারীদের গর্ভাবস্থায় নিম পাতা বা নিমের রস ব্যবহার না করাই ভালো। নিম গর্ভবতীর শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, যেমন- গর্ভপাত। গর্ভবতী নারীরা নিম পাতা বা নিম তেলের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, নিম বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টিরও কারণ হতে পারে।

৩. শিশুদের জন্য নিম অনুপযোগী (Neem is not suitable for children): নিম একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও সবক্ষেত্রে এটি শিশুদের জন্য উপযোগী নয়। শিশুদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পাকস্থলির সক্ষমতা পূর্ণ বিকশিত থাকে না, তাই নিমের মধ্যে থাকা শক্তিশালী অ্যালকালয়েড এবং অন্যান্য উপাদানগুলো শিশুদেহে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। শিশুরা অতিরিক্ত নিম সেবনে লিভারের সমস্যা, অ্যালার্জি বা রাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিম সেবন না করানোই ভালো।

৪. রক্তচাপের ‍উপর প্রভাবে নিম (Neem’s effect on blood pressure): নিম পাতার রস সেবন করলে রক্তের উচ্চচাপ হ্রাস হয়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিমপাতার রস সেবন অনেক সময় রক্তের চাপ অতিরিক্ত কমে যেতে পারে- যা রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৫. নিমের দ্বারা লিভারের ক্ষতি (Liver damage caused by neem): অতিরিক্ত নিম পাতা বা নিমের রস সেবন পাকস্থলির ক্ষতির কারণ হতে পারে। কখনও কখনও লিভারের ক্ষমতাও হ্রাস করে দিতে পারে। তাই দীর্ঘ মেয়াদে বা অধিক পরিমাণে নিমের রস সেবন না করাই ভালো।

 

পরিশেষে বলা যায়, নিম একটি অতিউপকারী একটি বৃক্ষ। এর অনেক উপকারী দিক রয়েছে, তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে ঘরোয়া উপায়ে নিমের মাধ্যমে অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে নিম সেবন বা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

পড়ুন- হরকরা ডটকম

Mostafizur Rahman
Mostafizur RahmanContent Writer

Mostafizur Rahman is the author and content strategist at Harkora, specializing in South Asian history, culture, and architecture. With a strong background in English/Bangla Language & Literature, General Knowledge, and job circulars, he provides well-researched and insightful content. Passionate about practical life in Bangladesh, he also covers essential citizen services, including e-Passport, visa processes, overseas employment, and studying abroad.

Scroll to Top